প্রকাশিত: Fri, Feb 24, 2023 2:22 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 8:23 PM

সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতায় কলঙ্কিত চাঁদমুখ

খালিদ খলিল : সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দরিদ্র। টাকার অভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারে না, বাধ্য  হয়ে, না জেনে বা জেনে সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক ও সমঝদারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লম্পটদের শরণাপন্ন হতে হয়। আছড়ে পড়তে হয় তাদের পায়ে। তখন ওরা মিষ্টি হাসি আর আশ্বাস দিয়ে বলে, পায়ে কেন? বুকে এসো। তোমার জায়গা তো এখানে। এরপর যা হওয়ার তাই হয়। শেষে হাতে কি টাকা ধরিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে কোনো পুরুষ মানুষের জায়গা নেই। কোনো পুরুষ শিল্পী বা সংগঠক যদি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যান- তখন তারা কৌশলে বলেন, ‘আপনাদের ওমক শিল্পী খুব ভালো গান করেন (নিশ্চয় নারী শিল্পী) তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েন, গানও শুনবো, কন্ট্রিবিউশনের টাকাটাও দিয়ে দেবো।' আপনি কষ্ট করে আর আইসেন না। কী চমৎকা। 

আর যদি নারী শিল্পী না পাঠান, তাহলে আপনি পুরুষ শিল্পী বা সংগঠক ঘুরতে ঘুরতে, আর আশ্বাস পেতে পেতে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে, কন্ট্রিবিউশন পাবেন না। অনুষ্ঠানে ভদ্রলোক (?) আসবেন, দেশ, সমাজ, সাংস্কৃতিক বিষয়ে মধুর মধুর কথা বলবেন, এরপর অনুষ্ঠান শেষে আড়ালে নিঃশব্দে চলে যাবেন। ঐ কলঙ্কিত চাঁদমুখের আর দেখা পাবেন না। এসব লম্পট সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক আর সাংস্কৃতিক সমঝদারদের এ সমাজের খুব কমজনই চেনেন। বেশ ক'জন ভুক্তভোগী নারী শিল্পী ও সংগঠক আমাকে এরকম দু'একজন লম্পট সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কে তাঁদের রোমহর্ষক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। যদি একটি আবাসিক হোটেল এর নাম বলি-তাহলেও অনেকে চিনে যাবেন এই লম্পটদের। কীভাবে সেখানে প্রথমে আপ্যায়নের নামে কফি বা কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তাদের পরাস্ত করা হয়, অতঃপর ঘুম ঘুম চোখে অসুস্থ বলে রুমে নেওয়া হয়। 

শেষে রাত পার হয়ে পাখির কলতানে সকাল হয়। সেখান থেকে পৃষ্ঠপোষকতার কিছু টাকা নিয়ে আমাদের সঙ্গীত চর্চা অব্যাহত রাখতে হয়। মনে পড়ে আজ সিঙ্গার গ্রুপের দেশের সেরা সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক জামিল আহমেদ এর কথা। কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন কখনো ফেরত আসেননি। তিনি তাঁর বাৎসরিক বাজেটেই সাংস্কৃতিক চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য বাজেট রাখতেন। সেখানে কোনো নারী শিল্পীকে যেতে হতো না। তখন সাংস্কৃতিক চর্চা ও ছিলো বেগবান। এরকম অনেক সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক সেসময় ছিলেন, আজ তাঁরা  নেই। সেখানে শূন্যতা পূরণে গজিয়ে উঠেছে লম্পট সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকদের।